২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। উন্নত সমৃদ্ধশালী দেশে পরিণত হতে হলে বাংলাদেশকে এই সময়ের মধ্যে প্রায় ষাট হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্নের ক্ষমতা অর্জন করতে হবে।

সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে তিন মেগা বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ। এর মধ্যে অন্যতম রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (আরএনপিপি)। শুধু নিউক্লিয়ার ক্লাবেই প্রবেশ নয়, কেন্দ্রটি বিশ্বে বাংলাদেশকে অন্যভাবে পরিচিত করিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ব পরিস্থিতিতে আমদানি নির্ভর জ্বালানি থেকে তৈরি বিদ্যুতের অনিশ্চয়তার ঝুঁকি কাটবে। এর ফলে নিশ্চিত হবে বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা। এটা অন্যতম একটি বড় ভ্যালু এ প্রজেক্টের। সাথে এ প্রকল্পকে ঘিরে যে বিপুল সংখ্যক দক্ষ জনশক্তি তৈরি হচ্ছে, তা দেশের অ্যাসেড হিসেবে কাজ করবে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ড. ইয়াফেস ওসমান এ বিষয়ে বলেন, বাংলাদেশ ৩৩তম দেশ; যারা নিউক্লিয়ার নিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করতে পারে। রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের মর্যাদা বেড়ে যাবে। বিশ্বে আমাদের দেশের অবস্থান বদলে যাবে। যেদিন আমরা বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে পারব, সেদিন থেকে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে বাংলাদেশ একটা অনন্য মর্যাদায় গিয়ে পৃথিবীর সামনে দাঁড়াবে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালানির বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকার কেন্দ্রটি নির্মাণ করছে। কেন্দ্রটি একটানা ভালভাবে ৫০ বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে। আর এটি সংস্কার করে আরো ৩০ বছর চালানো যাবে। এ ধরনের একটি কেন্দ্র স্থাপন করলে ৮০ বছর সেখান থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া সম্ভব। যেখানে অন্য জ্বালানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সর্বোচ্চ ২৫ বছর পাওয়া যায়। শুরুতে কেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় বেশি হলেও দীর্ঘমেয়াদী উৎপাদন পরিকল্পনায় পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন লাভজনক হবে।

এর পাশাপাশি আরো বেশকিছু বিষয়ে লাভজনক হবে দেশ। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দেশের পাল্লায় অনেক অর্জন যোগ হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। যেমন- আমদানি নির্ভর জ্বালানি থেকে তৈরি বিদ্যুতের নিশ্চয়তা পেতে যাচ্ছে দেশ। এ প্রকল্পকে ঘিরে প্রচুর পরিমাণ দক্ষ জনশক্তি তৈরি হচ্ছে দেশে, যারা দেশের সম্পদে পরিণত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ডিপার্টমেন্ট চালু হয়েছে, যা উন্নত অনেক দেশের সাথে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের মান বাড়াচ্ছে। তৈরি হচ্ছে সহজ ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুবিধা। উৎপন্ন বিদ্যুৎ জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাবে। দেশের অর্থনীতির চাকাকে আরো সচল ও মজবুত করবে। পরিবেশ দূষণের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করতে সহায়তা করবে। এমন অনেক বিষয়ই এই প্রকল্প থেকে দেশের ভাবমূর্তিতে যোগ হবে।

আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে এক ইউনিটের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেনি। দুই ইউনিটের বা ১১০০ মেগাওয়াটের অধিক সক্ষমতা সম্পন্ন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রত্যাশিত মূল্যে ও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যায়। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রও দুই ইউনিটের হবে।

পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ব্যয় অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। তবে সিন্যাপস এনার্জির ২০০৮ সালের হিসাব অনুযায়ী ১১০০ মেগাওয়াটের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আনুমানিক ব্যয় ৯ বিলিয়ন ডলার। প্রখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিনের ২০১২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১০০০ মেগাওয়াটের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের খরচ ৭ বিলিয়ন ডলার।

২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুই ইউনিটের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যয় হচ্ছে ১২ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। মোট ব্যয়ের নব্বই শতাংশ রুশ ফেডারেশন ঋণ হিসেবে দেবে। বাকি ১০ শতাংশ বাংলাদেশ অর্থায়ন করবে। ২০২৩ সালে ১২০০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। ২০২৪ সাল নাগাদ দু’টি রি-অ্যাক্টর থেকে আমাদের জাতীয় গ্রিডে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট পারমাণবিক বিদ্যুৎ যোগ হবে।

আর্থিকভাবে লাভবান হবে দেশ: প্রতিবছর বাংলাদেশকে ৫৬৫ মিলিয়ন ডলার কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু সরকারের প্রাক্কলন অনুযায়ী প্রকল্পের রিটার্ন থেকেই কিস্তির অর্থ উঠে আসবে। ফলে ভর্তুকির দরকার হবে না।

পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ব্যয়
পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ব্যয় অনেক বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। তবে সিন্যাপস এনার্জির ২০০৮ সালের হিসাব অনুযায়ী ১১০০ মেগাওয়াটের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আনুমানিক ব্যয় ৯ বিলিয়ন ডলার। প্রখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিনের ২০১২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী ১০০০ মেগাওয়াটের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের খরচ ৭ বিলিয়ন ডলার।
২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুই ইউনিটের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যয় হচ্ছে ১২ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ব্যয় গ্রহণযোগ্য। মোট ব্যয়ের নব্বই শতাংশ রুশ ফেডারেশন ঋণ হিসাবে দিবে। বাকি ১০ শতাংশ বাংলাদেশ অর্থায়ন করবে। ২০২৩ সালে ১২০০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। ২০২৪ সাল নাগাদ দু’টি রি-অ্যাক্টর থেকে আমাদের জাতীয় গ্রিডে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট পারমাণবিক বিদ্যুৎ যোগ হবে। বাস্তবায়ন হবে আরেকটি স্বপ্নের।

বিদ্যুৎ বিক্রি থেকে আয়: নির্মাণ শুরু সাত বছরের মাথায় ২০২৩ সালে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের ভিভিইআর-১২০০ মডেলের (জেনারেশন থ্রি-প্লাস) প্রথম রি-অ্যাক্টরটি উৎপাদনে আসবে। তার একবছর পর, ২০২৪ সালে উৎপাদনে আসবে দ্বিতীয় রি-অ্যাক্টরটি। দ্বিতীয়টির উৎপাদন ক্ষমতাও ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। অর্থাৎ ২০২৪ সাল নাগাদ আমাদের জাতীয় গ্রিডে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট পারমাণবিক বিদ্যুৎ যোগ হবে।

আমাদের দেশের বিদ্যুতের যে চাহিদা রয়েছে, তার অন্তত দশ ভাগ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পূরণ করতে সক্ষম হবে। হিসাব মোতাবেক, দুটি রি-অ‌্যাক্টর থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে ২৪০০ মেগাওয়াট। ফলে পাওয়া যাবে ২৪ লাখ কিলোওয়াট বা ইউনিট। ৫ টাকা ইউনিট হিসাবে এতে প্রতি ঘণ্টায় আয় হতে পারে এক কোটি ২০ লাখ টাকা। দৈনিক আয় হতে পারে ২৮ কোটি ৮০ লাখ। বাৎসরিক আয় হতে পারে ১০ হাজার ৫১২ কোটি টাকা বা ১২৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর বিপরীতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে এক বছরে খরচ হতে পারে ৩৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

ঋণ পরিশোধ করেও লাভ: গ্রেস পিরিয়ডের কারণে রাশিয়ার দেওয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে ২০২৭ সালের মার্চ থেকে। প্রতি বছর দু’টি কিস্তিতে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। ৪ শতাংশ সুদ হারে প্রতি বছর ৫৬৫ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে। উৎপাদিত বিদ্যুৎ প্রতি ইউনিট ৫ টাকা করে ধরা হলে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৯০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও এক বছরে নিট আয় হবে ৭৭০ মিলিয়ন ডলার। সুতরাং ভর্তুকি ছাড়া ঋণ পরিশোধ করেও লাভ করার সুযোগ থাকবে।

অর্থনীতিবিদ ড. মাসরুর রিয়াজ বলেন, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ অপরিহার্য। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের প্রথমেই প্রয়োজন পর্যাপ্ত এবং নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ। দেশের সকল মানুষের কাছে এবং বিভিন্ন অর্থনৈতিক সেক্টরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। এই কেন্দ্র বিদ্যুৎ উৎপাদনে নিশ্চয়তা দিতে যাচ্ছে, প্রকারন্তে দেশে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করছে। এ ছাড়া ১২ বিলিয়ন ডলারের এই প্রকল্প থেকে ৬০ বছরে ফেরত আসবে প্রায় ৬৬ বিলিয়ন ৭৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ ছাড়াও ৬০ বছর পরেও আপগ্রেড করে প্রকল্পটি চালানো যাবে। বিশ্ব পরিস্থিতিতে আমদানি নির্ভর জ্বালানি থেকে তৈরি বিদ্যুতের অনিশ্চয়তার ঝুঁকি কাটবে।

আরো যেসব সুবিধা পাওয়া সম্ভব: পারমাণবিক প্রযুক্তি বিদ্যুৎ উৎপাদনের সর্বাধুনিক নিরাপদ প্রযুক্তি এবং নিশ্চয়তাদানকারী টেকসই উৎস। এটা জ্বালানি শক্তি আমদানিতে নির্ভরতা হ্রাস করে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে পারমাণবিক প্রযুক্তি একটি উপায়, যা বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাকে নির্ভরযোগ্য ও উন্নততর করে। আন্তর্জাতিক শক্তি-সরবরাহ বাজারে নিয়মিতভাবে তেল/গ্যাস সরবরাহের অনিশ্চয়তা এবং জ্বালানি শক্তিতে উন্নত দেশসমূহে তেল/গ্যাসের মজুত দ্রুত হ্রাস পেতে থাকা, আন্তর্জাতিক বাজারে তেল/গ্যাসের মূল্য সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা, গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসরণ হ্রাসের মাধ্যমে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান।

পারমাণবিক কূটনীতিতে বাংলাদেশের বিজয়: কোনো দেশ চাইলেই অর্থাৎ আর্থিক সামর্থ্য ও দক্ষ জনবল থাকলেও পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে পারে না। এক্ষেত্রে ওই দেশকে তার প্রতিবেশী দেশ, আন্তর্জাতিক মহল ও আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থাকে (আইএইএ) বিশেষত এ নিশ্চয়তা দিতে হয় যে, তারা পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার করবে। আর মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের ক্ষেত্রে এ নিশ্চয়তা প্রদান করে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় সমর্থন আদায় অর্থাৎ পারমাণবিক কূটনীতিতে বিজয় অর্জন অপেক্ষাকৃত কঠিন একটি কাজ। কিন্তু এ কাজটি-ই করতে সক্ষম হয়েছে বর্তমান সরকার। ইতোমধ্যে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আরেকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ঘোষণাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমানে এর সাইট নির্বাচনের কাজ চলবে।

প্রকল্পটি হবে নিরাপদ ও কল্যাণকর: শুরু থেকেই প্রকল্পটির নিরাপত্তা নিয়ে অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চয়তা দেওয়া হচ্ছে।

এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা ও দুর্ঘটনা পরবর্তী অবস্থা প্রতিরোধের লক্ষে প্রযুক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সব রকম ব্যবস্থা রেখেই স্থাপন করা হচ্ছে। কেন্দ্রের ভিভিইআর-১২০০ রি-অ‌্যাক্টর কোর মেল্টডাউন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে রি-অ‌্যাক্টর কন্টেইনমেন্টকে রক্ষা করার জন্য এই কেন্দ্রটিতে থাকছে বিদ্যুৎশক্তিবিহীন দীর্ঘকালীন কুলিং রি-অ‌্যাক্টর ও তাপক্ষয়কারী ব্যবস্থা। এটি প্রাথমিক হিট সিঙ্ক’র ওপর নির্ভরশীল হবে না। দুর্ঘটনার পর রি-অ‌্যাক্টরকে শীতলায়ন করতে বা তাপ ক্ষয় করার জন্য সমুদ্র, নদী, কুলিং টাওয়ারের মধ্যে আলাদাভাবে ডুবিয়ে রাখার প্রয়োজন হবে না। এটির ভেতরেই অটোমেটিকভাবে শীতলায়নের কাজ হবে।

রাশিয়ার রোসাটম গত বছরের শুরুতে আরএনপিপির নিরাপত্তা নিয়ে দেশের গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে একটি ওয়েবিনারে এসব তথ্য জানান রাশিয়ান বিশেষজ্ঞ ও জাতীয় পারমানবিক শক্তি প্রকৌশল ও গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়ের (এমইপিএইচআই) নিউক্লিয়ার ফিজিক্স ও টেকনোলজি বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক আলেক্সি পুজাকভ ওয়াই। পুজাকভ বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিভিইআর-১২০০ রি-অ‌্যাক্টর কন্টেইনমেন্টের দ্বিস্তর বিশিষ্ট দেয়াল, বেজ প্লেটসহ স্টিলের সিল ক্লাডিং, নিচ্ছিদ্র ব্যবস্থা, আইসোলেটিং ভাল্ভ, পরিবহন, প্রধান ও জরুরি লক ব্যবহার করা হচ্ছে; যা সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। এমনকি বিমান হামলার মাধ্যমেও আরএনপিপি রি-অ‌্যাক্টকে ক্ষতিগ্রস্ত করা সম্ভব হবে না।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নকশার মূলনীতিগুলো এবং ভিভিইআর-১২ শ’ রি-অ‌্যাক্টরের উপাদানগুলোর গঠন ও কীভাবে এটি সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে তার ব্যাখ্যাকালে পুজাকভ বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিভিইআর-১২০০ রি-অ‌্যাক্টরের শুধুমাত্র পাওয়ার ইউনিট কাজ করবে। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেও শুধু পাওয়ার ইউনিট বন্ধ হবে। এতে রেডিয়েশন বিকিরণ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকবে না।

আলেক্সি পুজাকভ বলেন, ভিভিইআর-১২০০ রি-অ‌্যাক্টরযুক্ত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নকশা রাশিয়ার সাধারণ সুরক্ষা নিয়মে আইএইএ’র আন্তর্জাতিক পারমাণবিক নিরাপত্তা গ্রুপের পরামর্শ এবং ২০১২ সালের আইএইএ’র পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সুরক্ষা নকশার মানকে নিশ্চিত করেছে। যা রাশিয়ার সাধারণ সুরক্ষা নিয়ম ডব্লিউইএনআরএ (ওয়েস্টার্ন ইউরোপিয়ান পারমাণবিক রেগুলেটর অ্যাসোসিয়েশন) এর ২০১০ সালের নতুন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সুরক্ষা উদ্দেশ্যের সাথে সম্পূর্ণরূপে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

ওয়েবিনারে পুজাকভ তার উপস্থাপনায় উদ্ভাবনী প্রযুক্তি, প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর অপারেশন পদ্ধতি এবং কাঙ্ক্ষিত সুরক্ষা নিশ্চিত করেছে তা বিশেষভাবে উল্লেখ করে বলেন, বিশ্বব্যাপী ভিভিইআর-১২০০ রি-অ‌্যাক্টর প্রায় ১৪০০ রি-অ‌্যাক্টর বছরের চেয়েও বেশি সময় ধরে অপারেশনে থাকবে। যা ইতোমধ্যেই একে সবচাইতে নির্ভরযোগ্য ও নিরাপদ হিসেবে প্রমাণ করেছে। ফলে আরএনপিপি প্রকল্পের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কোনোরূপ ভীতি বা সন্দেহের অবকাশ নেই। প্রকল্পটি হবে নিরাপদ ও কল্যাণকর।